লো স্ট্যান্ডার্ড (Low Standard), বিলো স্ট্যান্ডার্ড ও  ডাবল স্ট্যান্ডার্ড (Double Standard)

Standard level

একটি সমাজ, প্রতিষ্ঠান, বা ব্যক্তির মানদণ্ড যখন গুণগত মানে দুর্বল হয়, তখন সেটিকে “লো স্ট্যান্ডার্ড” বা নিম্ন মানদণ্ড বলা হয়। এটি কেবল পণ্য বা পরিষেবার ক্ষেত্রেই নয়, নৈতিকতা, আচরণ, শিক্ষা, ও সংস্কৃতিতেও প্রতিফলিত হতে পারে।

লো স্ট্যান্ডার্ডের দৃষ্টান্ত:

লো স্ট্যান্ডার্ডের অনেক রূপ আছে। যেমন:

  • শিক্ষা ক্ষেত্রে: শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মানসিক প্রস্তুতি ও পাঠদান প্রক্রিয়ায় গুণগত মানের অভাব।
  • পণ্য বা সেবায়: নিম্নমানের কাঁচামাল ব্যবহার করে তৈরি পণ্য, যা দীর্ঘস্থায়ী হয় না বা ব্যবহারকারীর স্বাস্থ্যের ক্ষতি করতে পারে।
  • কর্মস্থলে: নিয়মিত অনুপস্থিতি, দায়িত্বজ্ঞানহীনতা, বা নৈতিকতাবিরোধী কাজকর্ম।

প্রভাব:

লো স্ট্যান্ডার্ড সমাজের সামগ্রিক অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করে। এটি আস্থা কমিয়ে দেয়, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন হ্রাস করে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

সমাধান:

লো স্ট্যান্ডার্ড থেকে বেরিয়ে আসার জন্য প্রয়োজন:

  • সচেতনতা বৃদ্ধি
  • গুণগত শিক্ষা
  • দক্ষ প্রশিক্ষণ
  • নৈতিক মূল্যবোধের চর্চা

 

ডাবল স্ট্যান্ডার্ড (Double Standard)

ডাবল স্ট্যান্ডার্ড অর্থ হচ্ছে- একই বিষয়ে বা আচরণে ভিন্ন ভিন্ন মানদণ্ড প্রয়োগ করা, যা পক্ষপাতমূলক ও অবিচারপূর্ণ। এটি নীতিগত অসাম্যকে নির্দেশ করে।

ডাবল স্ট্যান্ডার্ডের উদাহরণ:

  • সমাজে পুরুষ ও নারীর জন্য ভিন্ন নৈতিকতা: যা একজনের ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য, তা আরেকজনের জন্য অপরাধ।
  • রাজনীতিতে: এক দলের দুর্নীতি আড়াল করা, অন্য দলের জন্য কঠোর শাস্তির দাবি।
  • পারিবারিক জীবনে: সন্তানদের মধ্যে বৈষম্য, যেমন ছেলেকে স্বাধীনতা দেওয়া কিন্তু মেয়েকে নিয়ন্ত্রণে রাখা।

প্রভাব:

ডাবল স্ট্যান্ডার্ড সমাজে বিভাজন, ক্ষোভ এবং বৈষম্য তৈরি করে। এটি বিশ্বাসহীনতা, অন্যায় ও হিংসা উসকে দিতে পারে।

সমাধান:

এই সমস্যা দূর করতে:

  • সমান আচরণ নিশ্চিত করতে হবে
  • নৈতিক শিক্ষার গুরুত্ব বাড়াতে হবে
  • ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক স্তরে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে হবে

 

“বিলো স্ট্যান্ডার্ড” বলতে বোঝায় কোনো কিছুর মান নির্ধারিত বা প্রত্যাশিত মানের নিচে থাকা। এটি কোনো পণ্য, পরিষেবা, আচরণ, কাজের গুণমান বা সামাজিক দায়িত্বের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হতে পারে। এই ধরনের মানের অভাব সমাজ, প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তিগত জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

উদাহরণ:

  • শিক্ষা: বিদ্যালয়ে শিক্ষাদানের মান যদি মানসম্মত না হয়, তবে সেটি বিলো স্ট্যান্ডার্ড শিক্ষা।
  • স্বাস্থ্যসেবা: সরকারি হাসপাতালে পর্যাপ্ত চিকিৎসা সামগ্রী ও যত্নের অভাব থাকলে, তা বিলো স্ট্যান্ডার্ড পরিষেবার উদাহরণ।
  • পণ্য: বাজারে অনেক পণ্য আছে যেগুলোর গুণগত মান নির্ধারিত মানের নিচে। যেমন, নিম্নমানের ওষুধ বা খাবার।
  • কর্মসংস্থান: কর্মক্ষেত্রে যদি নিরাপত্তা, বেতন ও সুযোগ-সুবিধা ঠিক না থাকে, সেটিও বিলো স্ট্যান্ডার্ড পরিবেশ।

 

পরিণতি:

  • মানুষের আস্থার অভাব সৃষ্টি হয়।
  • দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতির মুখোমুখি হতে হয়; ব্যক্তিগত, সামাজিক ও জাতীয়ভাবে।
  • প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকা কঠিন হয়।

 

করণীয়:

  • নিয়মিত মান পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন।
  • দক্ষ প্রশিক্ষণ ও প্রশিক্ষকদের মানোন্নয়ন।
  • সরকার ও প্রতিষ্ঠানকে নীতি অনুযায়ী মান বজায় রাখতে বাধ্য করা।

 

ডাবল স্ট্যান্ডার্ড, বিলো স্ট্যান্ডার্ড এবং লো স্ট্যান্ডার্ড, এই তিনটি সমস্যা ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রের অগ্রগতির পথে বড় অন্তরায়। ডাবল স্ট্যান্ডার্ড আমাদের বিচার ও ন্যায়বোধকে প্রশ্নবিদ্ধ করে, যেখানে একই আচরণের জন্য ভিন্ন ভিন্ন মানদণ্ড প্রয়োগ করা হয়। অপরদিকে, লো স্ট্যান্ডার্ড ও বিলো স্ট্যান্ডার্ড গুণগত মানের ঘাটতিকে নির্দেশ করে, যা শিক্ষা, স্বাস্থ্য, শিল্প, প্রশাসনসহ সব ক্ষেত্রেই নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

এই ধরনের মানহীনতা ও বৈষম্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গি একটি সমাজে হতাশা, অবিচার ও অস্থিরতা সৃষ্টি করে। উন্নত ও ন্যায়সঙ্গত সমাজ গড়ে তুলতে হলে আমাদেরকে নৈতিকতা, গুণগত মান ও সমান আচরণের চর্চা নিশ্চিত করতে হবে।

সচেতনতা, শিক্ষা, জবাবদিহিতা এবং মূল্যবোধ; এই চারটি দিককে ভিত্তি করে আমরা ডাবল স্ট্যান্ডার্ড, লো স্ট্যান্ডার্ড ও বিলো স্ট্যান্ডার্ড থেকে মুক্ত একটি সমাজ গঠনে অগ্রসর হতে পারি।